স্বদেশ ডেস্ক:
সবার দৃষ্টি এখন ‘প্রাচ্যের ডান্ডি’ খ্যাত নারায়ণগঞ্জের দিকে। আজ রবিবার সকালে শুরু হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। প্রথমবারের মতো সেখানে ভোট হচ্ছে ব্যালটবিহীন ইভিএমে। ভোটের ফল কী হবে? আবারও সেলিনা হায়াৎ আইভী নগরপিতার আসনে বসবেন, নাকি প্রথমবারের মতো তৈমূর আলম খন্দকার মেয়র হবেন, তা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা, জল্পনা-কল্পনা।
এ দুই প্রার্থী ছাড়াও আজকের নির্বাচন সামনে রেখে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। তিনি ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে নৌকার পক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তবে তার বক্তব্যের প্রতিফলন আজকের ভোটে কতটুকু দেখা যাবে এ প্রশ্নটিও আসছে ঘুরেফিরে।
রাজধানী লাগোয়া নারায়ণগঞ্জ ছোট্ট সিটি করপোরেশন হলেও মর্যাদার দিক থেকে আজকের ভোট বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে প্রবল আগ্রহ তৈরি করেছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ায় দলটির নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতানেত্রীদেরও দৃষ্টি আইভীকে ঘিরে। তাকে বিজয়ী করে আনতে কিছুদিন ধরেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা চষে বেড়িয়েছেন ভোটের মাঠ। আজকের ভোটের ওপর তাদের কড়া নজর রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি পাওয়ায় তৈমূর আলম খন্দকারের পক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কোনো নেতাকে ভোটের মাঠে দেখা যায়নি। তবে স্থানীয় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও মহিলা দলের অনেক নেতাই ভোটের মাঠে গণসংযোগে ছিলেন। নির্বাচনে তৈমূর আলম খন্দকারকে বিএনপির ছায়া প্রার্থী হিসেবেই আখ্যা দিচ্ছেন অনেকে। বিএনপি নির্বাচনে কোনো প্রার্থী না দিলেও দলটির নেতৃস্থানীয়দের অনেকেরই নজর রয়েছে আজকের ভোটে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও নজর রাখছে আজকের ভোটের দিকে।
প্রশাসনের নজরেও রয়েছে নারায়ণগঞ্জের ভোট উৎসব। গ্রহণযোগ্য, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে শান্তিপূর্ণ ভোট নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা শঙ্কা প্রকাশ করায় প্রশাসনের তৎপরতা আরও বাড়ানো হয়েছে গতকাল শনিবার থেকে। নিবার্চন কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাবলয়। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদেরও নজর আজকের ভোটের দিকে। বর্তমান কেএম নুরুল হুদা কমিশনের আমলে এটাই সর্বশেষ বড় নির্বাচন। তাই এ কমিশনও চাচ্ছেন বিদায়ের আগে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন উপহার দিতে। কোথাও প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি রয়েছে কিনা, তা বারবার খতিয়ে দেখছেন নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
কয়েক দিন আগে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তৈমূর আলম খন্দকারকে ছাপিয়ে আলোচনায় উঠে আসে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এমপি শামীম ওসমানের নাম। তিনি ভোটে কোন দিকে যাবেন, আইভী না তৈমূরের পক্ষে থাকবেন, তা নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয় বিভিন্ন মহলে। দুই হেভিওয়েট প্রার্থী আইভী ও তৈমূরের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যেও বারবার উঠে আসে শামীম ওসমানের নাম। এতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভোটের মাঠ। প্রথমদিকে নাসিক নির্বাচন নিয়ে চুপ ছিলেন শামীম ওসমান। কিন্ত শেষ পর্যন্ত দুই প্রার্থীর তর্কবিতর্ক আর মন্তব্যের জেরে নিজের নীরবতা ভেঙে ১০ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে নৌকার পক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আইভীর নাম উচ্চারণ না করে তিনি নানা কথা বলেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারকে উদ্দেশ করে শামীম ওসমান বলেন, ‘তৈমূর সাহেব আপনি আপনার মতো কথা বলতে থাকেন। আপনি বলেন, হাতি নৌকা ডুবিয়ে দেবে কিন্তু মনে রাখবেন, নারায়ণগঞ্জে নৌকা ডোবানোর ক্ষমতা বিএনপি-জামায়াতের নেই। হাতির সাইজ বেশি বড় হলে প্রয়োজনে কাঁধে করে দৌড় দেব, কিন্তু নৌকার ওপর উঠতে দেব না।’